আখলাক কত প্রকার ও কি কি?

আখলাক কত প্রকার ও কি কি? (অনার্স পরিক্ষা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-২০১৯)
How many types of ‘Akhlak’ and what are they?
আখলাক দুই প্রকার .আখলাকে হামিদাহ(সচ্চরিত্র) .আখলাকে যামিমাহ(অসচ্চরিত্র)
আখলাক আরবি শব্দ।এটি বহুবচন।এক বচন খূলূকুন।এর আভিধানিক অর্থ-স্বভাব চরিত্র ইত্যাদি।শব্দগত বিবেচনায়।আখলাক বলতে সচ্চরিত্র ও দুশ্চরিত্র উভয়কেই বোঝায়।তবে প্রিচলিত অর্থে আখলঅক শুধূ সচ্চরিত্রকেই বুঝায়।যেমন ভালে চরিত্রের মানুষকে আমরা চরিত্রবান বলি।আর মন্দ চরিত্রের মানুষকে বলি চরিত্রহীন।ব্যবহারিক বিবেচনায় আখলাক দ্বারা ভালো ও উত্তম চরিত্রবান বোঝানো হয় ।
মূলত আখলাক হলো মানুষের স্বভাবসমূহের সমন্বিত রুপ।মানুষের আচারআচরণ, চিন্তাভাবনা, মানসিকতা, করুন্মপন্থা সবকিছুকে চরিত্র বা আখলাক বলা হয়।তা ভালো কিংবা মন্দ হতে পারে।এককথায় মানুষের সকল কাজ ও নীতির সমষ্টিকেই আখলাক বলা হয় ।
আখলাক দু প্রকার । যথা –
ক. আখলাকে হামিদাহ
. আখলাকে যামিমাহ

ক. আখলাকে হামিদাহপরিচয়
আখলাক অর্থ চরিত্র স্বভাব । আর হামিদাহ অর্থ প্রশংসনীয় । সুতরাং আখলাকে হামিদাহ অর্থ প্রশংসনীয় চরিত্র, সচ্চরিত্র । ইসলামি পরিভাষায় যেসব স্বভাব বা চরিত্র সমাজে প্রশংসনীয় ও সমাদৃতম আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (স) এর নিকট প্রিয় সেসব স্বভাব বা চরিত্রকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয় ।
এককথায় মানব চরিত্রের সুন্দর নির্মল ও মার্জিত গুণাবলিকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয় ।মানুষের সার্বিক আচার আচরণ যখন শরিয়ত অনুসারে সুন্দর, সুষ্ঠু ও কল্যাণকরুন হয় তখন সে স্বভাব –চরিত্রকে বলা হয় আখলাকে হামিদাহ ।
আখলাকে হামিদাহকে আখলাকে হাসানাহ বা হুসনুল খুল্কও বলা হয় ।আখলাকে হাসানাহ অর্থ সুন্দর চরিত্র। মানব চরিত্রের উত্তম ও নৈতিক গুণাবলি আখলাকে হামিদাহ এর অন্তর্ভূক্ত । যেমন –সততা, সত্যবাদিতা ,ওয়াদা পালন, মানব সেবা, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা, দয়া ইত্যাদি ।
গুরুত্ব
আখেলাকে হামিদাহ মানবীয় মৌলিক গুণ ও জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।এর দ্বারাই মানুষ পূর্ণমাত্রায় মনুষত্বের স্তরে উপনীত হয় । মানবিকতা ও নৈতিকতার আদর্শ আখলাকে হামিদাহর মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা লাভ করে। মানুষের ইহ ও পরকালীন সুখ, শান্তি উত্তম আখলাকের উপরই নির্ভরশীল।সৎচরিত্রবান ব্যক্তি যেমন সমাজের চোখে ভালো, তেমনি মহান আল্লাহর নিকটও প্রিয় । মহানবি (স) –এর হাদিসে বলা হয়েছে-
অর্থ :
আল্লাহ তায়ালার নিকট সেই লোকই অধিক প্রিয়, চরিত্রের বিচারে যে উত্তম (ইবনে হিব্বান )
জন্য মানুষকে আখলাক শিক্ষা দেওয়াও নবিরাসুলগণের অন্যতম দায়িত্ব ছিল আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ () ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী সব ধরনের সৎগুণ তাঁর চরিত্রে পাওয়া যায় স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রসঙ্গে বলেছেন
অর্থ : নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ধারক (সূরা আল কালাম- আয়াত )
রাসুলুল্লাহ () ঘোষণা করেছেন,
অর্থ : “উত্তম চারিত্রিক গুণাবলিকে পূর্ণতা দানের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি ” (বায়হাকি )
রাসুলুল্লাহ (.) নিজে যেমন উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, তেমনি মানবজাতিকে সচ্চরিত্র গঠনের শিক্ষা দিয়েছেনপূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়ার জন্য তিনি সৎও নৈতিক স্বভাব অনুশীলনের নির্দেশ দিয়েছেনতিনি বলেছেন মুমনিগণের মধ্যে সেই পূর্ণ ইমানের অধিকারী যে তাদের মধ্যে চরিত্রের বিচারে সবচেয়ে উত্তম(তিরমিযি)
প্রকৃতপক্ষে সৎচরিত্র পরকালীন জীবনেও মানুষের কল্যাণের হাতিয়ার মুক্তির উপায় হবেউত্তম আচার-আচরণ মানুষকে পূন্য বা সাওয়াব দান করে মহানবি () বলেছৈনঅর্থ : সুন্দর চরিত্রেই পূন্য (মুসলিম )
. আখলাকে যামিমাহ পরিচয়
আখলাকে যামিমাহ অর্থ নিন্দনীয় স্বভাবমানুষের সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই ভালো নয়বরং মানব চরিত্রে এমন কিছূ দিক রয়েছে যেটি অপছন্দনীয় নিন্দনীয়মানব চরিত্রের এসব নিন্দনীয় স্বভাবগুলোকে আখলাকে যামিমাহ বলা হয়আখলাকে যামিমাহ হলো আখলাকে হামিদাহ- সম্পূর্ণ বিপরীতআখলাকে যামিমাহ- অন্য নাম আখলাকে সায়্যিআহআখলাকে সায়্যিআহ অর্থ অসৎচরিত্র, মন্দ স্বভাব ইত্যাদি
মানব চরিত্রে বহু নিন্দনীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছেযেমনমিথ্যা বলা,প্রতারণা,ঠাট্টাবিদ্রুপ,বিশ্বাসঘাতকতা,হিংসাবিদ্বেষ,লোভলালসা,পরনিন্দা,পরচর্চা,অপব্যয়কৃপণতা,ক্রোধ,গর্ব,অহংকার ইত্যাদিএসব স্বভাব আখলাকে যামিমাহ- অন্তভূক্তপরবর্তী পাঠগুলোতে আমরা আখলাকে যামিমাহ এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্তে জানব
কুফল বা অপকারিতা
মানব সমাজে আখলাকে যামিমাহর কুফল অত্যন্ত ভয়াবহএটি যেমন ব্যক্তি জীবনে অশান্তি ঢেকে আনে তেমনি সমাজ জীবনেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেঅসৎচরিত্র বা চরিত্রহীন ব্যক্তি পশূর চেয়েও অধমতার মধ্যে নীতি নৈতিকতা মানবিক মূল্যবোধের বিন্দুমাত্রও পাওয়া যায় নাসে শুধূ গড়নআকৃতিতে মানুষ কিন্তু তার স্বভাবচরিত্র হয় পশুর ন্যায়নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য সে মানবিক আদর্শসমূহকে বিসর্জন দেয়আখলাকে যামিমাহ- ফলে সে সবরকমের অন্যায়, অত্যাচার অশালীন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েএমনকি হত্যা-রাহাজানি, যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদিতেও জড়িয়ে পড়েফলে শান্তি, নিরাপত্তা, সামাজিক ঐক্য, সংহতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রিীতি বিনষ্ট হয়সমাজে অরাজকতা অশান্তি বিস্তার লাভ করে
মন্দ চরিত্রের মানুষ সমাজে ঘৃণার পাত্রকেউ তাকে ভালোবসে না, বিশ্বাস করে নাসকলেই তাকে ঘৃণা করে এড়িয়ে চলেতার বিপদাপদেও কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নাঅসৎচরিত্র মানুষকে পরকালীন জীবনে শোচনীয় পরিণতির দিকে নিয়ে যায়চরিত্রহীন ব্যক্তি সকল প্রকার পাপাচারে লিপ্ত থাকে সে আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হয়
আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালোবাসেন নাকিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা এরুপ অসৎচরিত্র ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেনমহানবি () বলেছেন-
অর্থ: ‘দুশ্চচরিত্র রুঢ় স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’(আবু দাউদ)
বস্ত্তত আখলাকে যামিমাহ অত্যন্ত ঘৃণিত বর্জনীয় স্বভাবএর ফলে দুনিয়া আখিরাতে মানুষ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়সকলেরই এসব স্বভাব থেকে বেঁচে থাকা উচিত
আমরা অসৎচরিত্র ত্যাগ করে সৎচরিত্র অবলম্বন করুনবসত্যিকার মানুষ হিসেবে সকলের প্রিয়মাত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করুনব

3 comments:

  1. জাজাকাল্লাহ

    ReplyDelete
  2. আখলাকে হামিদা কুফল গুলো কি কি? /
    ৮ম শ্রেণি

    ReplyDelete

Powered by Blogger.