সাংবাদিকতার ধরন । Types of journalism
নিম্নে সাংবাদিকতার বিভিন্ন রকম ধরন বা প্রকারভেদ আলোচনা করা হল ।
১.সাংবাদিকতা ছিল প্রচারণা ও গোয়েন্দা বৃত্তি
এক সময় সাংবাদিকতা ছিল
শুধুমাত্র
প্রচার
ও
প্রচারণার
মাধ্যম।
কোন
কোন
ক্ষেত্রে
বিশুদ্ধ
রকমের
গোয়েন্দাগিরি। জুলিয়াস
সিজারের
আমলে
সাংবাদিকতা
ছিল
একতরফা
প্রচার
মাত্র।
সম্রাটের
রাজ্য
পরিচালনার
খবর
,যুদ্ধ
জয়ের
খবর
প্রভৃত্তি
প্রচার
ই
ছিল
সাংবাদিকতার প্রধান
কাজ।
সে সময়ে সংবাদিক
বৃত্তির
কাজে
নিয়োজিত
লোকেরা
খবর
নিতেন
রাজা
বা
সম্রাটের সমালোচনা
হচ্ছে
কিনা
অথবা
রাজ্য
বা
সাম্রাজ্য
ক্ষতি
সাধনের
জন্য
কোন
রূপ
ষড়যন্ত্র
হচ্ছে
কিনা।
২.বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা
Objective Journalism
সাংবাদিক মোহমুক্ত ভাবে
নিজস্ব
মূল্যবোধ
নিষ্কাশিত
করে
নিরাবেগ
ভাবে
ঘটনা
যা
ঘটেছে
তার
হুবুহু
বিবরণ
তুলে
ধরার
নামই
হল
বস্তুনিষ্ঠতা। অনেকেই
বলেছেন,
সাংবাদিকের
কাজ
কোন
ঘটনার
রির্পোট
করা
, গোয়েন্দা
বৃত্তি
নয়।
সাংবাদিক
ঘটনার
বিবরণ
দিয়ে
যাবেন,
সত্য
মিথ্যা
যাচাই
করার
ভার
পাঠকের।
কোন ঘটনার হয়ত
পক্ষ-বিপক্ষ
থাকে।
তাদের
সবাই
সত্য
বলছেন
তার
ঠিক
নেই,
কিংবা
তাদের
সবার
অভিযোগই
যে
সত্য
তাও
নয়।
এক্ষেত্রে
সাংবাদিকের
কাজ
হল
পক্ষ-বিপক্ষ
জনদের
অভিযোগ
বা
বক্তব্য
তুলে
ধরা।
তিনি
তাদের
ভালো
মন্দের
বিচার
করতে
যান
না।
সংশ্লিষ্ট
জনের
কথাবার্তাতেই সত্য
মিথ্যা
প্রতিফলিত
হয়ে
ওঠে।
৩. অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা Investigative Journalism
একজন সাংবাদিকের সাংবাদিকতা
করতে
গিয়ে
প্রায়ই
এমন
কিছু
নজরে
আসে
কিংবা
প্রশ্নের
সৃষ্টি
করে,
মনে
হয়
যেন
ঘটনার
পিছে
কোন
রহস্য
লুকিয়ে
আছে।
এসব
ঘটনার
ওপরের
চেহারাটা
ততটা
স্পষ্ট
নয়।
কিন্তু অনুসন্ধান করলেই
বোঝা
যায়
এর
ভেতরের
ব্যাপ্তি
বিশাল।
যে
তথ্যাবলী
লুকানো
ছিল,
রহস্যাবৃত
ছিল
কিংবা
যাকে
ইচ্ছাকৃত
ভাবে
লুকিয়ে
রাখা
হয়েছিল
তাকে
অনুসন্ধান
করে
বের
করে
রহস্য
উন্মোচনের
এক
চমৎকার
লক্ষ্যভেদী
হাতিয়ার
হল
অনুসন্ধানী
সাংবাদিকতা
।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সাধারণ
প্রতিবেদনের চেয়ে
এখানে
অনেক
বেশি
নথি-পত্রের
সমর্থন
প্রয়োজন
হয়।আর
এ
ধরনের
প্রতিবেদনের সাথে
জড়িত
থাকতে
পারে
কোন
ব্যক্তি
বা
প্রতিষ্ঠানের জীবিকা,সম্মান-সম্পত্তি
।
তাই
প্রতিবেদককে প্রতিবেদন
তৈরির
সময়
খুব
বেশি
সতর্ক
থাকতে
হয়।
এ কারণে প্রতিবেদক
প্রয়োজনীয়
এবং
প্রাসঙ্গিক
সব
নথি
পত্র
খুঁজে
পেতে
চান।
যদি
লিখিত
কিছু
পাওয়া
না
যায়,
তবে
অন্যান্য
গ্রহণযোগ্য
তথ্য
উৎস্য
থেকে
প্রাপ্ত
তথ্য
যাচাই-বাছাই
করে
নিতে
হয়
এবং
আইনগত
দিকটিও
ভালোভাবে
খতিয়ে
দেখে
তবেই
প্রতিবেদনটি ছাড়তে
হয়।
৪. এডভোকেসি সাংবাদিকতা
Advocacy Journalism
এডভোকেসি বলতে প্রচারধর্মী সাংবাদিকতাকে বোঝায়।
তবে
তা
কখনো
প্রচারণাধর্মী নয়।
প্রচারণা
বা
বিজ্ঞাপনে
সত্য
মিথ্যা
থাকতে
পারে।
সূত্র
সম্পর্কেও
একটা
সংশয়
থাকে।
সমাজের
জন্য
যা
কল্যাণকর
তার
পক্ষে
জন
সমর্থন
গড়ে
তোলার
জন্যই
এডভোকেসি
সাংবাদিকতার চর্চা
করা
হয়।
এ ধরনের সাংবাদিকতায় সাংবাদিকরা
সমাজের
কোন
সংস্কার
যোগ্য
মূল
বিচার্য
বিষয়
বা
ইস্যুকে
খোলাখুলি
সমর্থন
করেন
এবং
তার
সমর্থনে
ব্যাপক
ও
জোরালো
যুক্তি
তর্ক
উপস্থাপন
করেন।
এ
ধরনের
সাংবাদিকতায় নিয়োজিত
সাংবাদিকগণ
বস্তুনিষ্ঠতা মানেন
না।
কারণ
তাদের
নিরপেক্ষতার নীতি
নিয়ে
বসে
থাকলে
সমাজের
কল্যাণ
সাধিত
হয়
না
।
এডভোকেসি সাংবাদিকতা চর্চাকারী
সাংবাদিকরা
মনে
করেন,
তাদের
পাঠকরা
যথেষ্ট
পরিমাণে
শিক্ষিত নন ।
সুতরাং,
পাঠককে
শিক্ষিত
এবং
সচেতন
করে
তুলতে
তারা
সাংবাদিকতার চর্চা
করে
থাকেন।
৫. হলুদ সাংবাদিকতা
Yellow Journalism
সাংবাদিকতার ধরন এর
মধ্যে
নিন্দার্থেই প্রধানত
হলুদ
সাংবাদিকতা
কথাটি
ব্যবহৃত
হয়।
সাংবাদিকতার এ নিন্দনীয় ধারাটির
নামকরণ
করেছে
সাধারণ
জনগণ
।
সাংবাদিকতায় অকারণ
চমক
সৃষ্টি
ও
মহা
হৈ
চৈ
ফেলে
দেয়া
খবর
প্রকাশ
করা
কে
হলুদ
সাংবাদিকতা
বলে।
হলুদ সাংবাদিকতার জন্ম
দিয়েছিলেন
যুক্তরাষ্টের সংবাদপত্র
জগতের
দুই
পথিকৃৎ
উইলিয়াম
রূডলফ
হার্স্ট
ও
যোসেফ
পুলিৎজার। নিউইয়র্ক জার্নাল ও নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড এই
পত্রিকা
দুটির
পারস্পরিক
প্রতিযোগিতার ফসল
হলো
এই
হলুদ
সাংবাদিকতা। হার্স্ট
ও
পুলিৎজার
প্রথমে
একে
অপরের
সাংবাদিক,
কর্মচারীদের বেশি
অর্থের
বিনিময়ে
কিনে
নেওয়ার
এক
বাজে
প্রতিযোগিতায় লিপ্ত
হন।
তারপর তারা চাঞ্চল্যকর
খবরা-খবরের
প্রতিযোগিতায় লিপ্ত
হন।
তবে
তাদের
দুই
পত্রিকাতেই Yellow kid নামেএকটি কার্টুন
ছাপা
হত।
এ
কারণে
সে
সময়
থেকে Yellow
Journalism বা
হলুদ
সাংবাদিকতা
শব্দটির
প্রচলন
শুরু
হয়।
প্রকৃতপক্ষে হার্স্ট ও
পুলিৎজার
চাঞ্চল্যকে
প্রাধান্য
দিয়ে
পত্রিকার
কাটতি
বাড়াতে
চেয়েছিলেন।
চাঞ্চল্য
ও
রেষারেষি
শেষ
পর্যন্ত
তাদের
মধ্যে
হীন
ব্যক্তিগত
বিদ্বেষও
সহিংসতায়
পর্যবসিত
হয়েছিল।
হার্স্টের
চাঞ্চল্যকর
সাংবাদিকতার প্ররোচনাতেই উনিশ
শতকের
শেষ
ভাগে
আমেরিকা
স্পেনের
বিরুদ্ধে
যুদ্ধে
নেমে
গিয়েছিল।
আমাদের দেশেও এ
রকম
হলুদ
সাংবাদিকতার চর্চা
হতে
দেখা
যায়।
তবে
তা
বিশেষ
করে
সপ্তাহিক
পত্রিকা
গুলোতে
এবংকিছু
বেনামী
সাময়িক
পত্র
পত্রিকায়
দেখা
যায়।
৬. উন্নয়ন সাংবাদিকতা
Development Journalism
মানুষের উন্নয়ন সাধন
করতে
গিয়ে
কিছুটা
প্রচারধর্মী এবংকিছুটা
অনুসন্ধানধর্মী যে
সাংবাদিকতার সূচনা
তারই
নাম
উন্নয়ন
সাংবাদিকতা
।
সরকারি
ও
বেসরকারি
উন্নয়ন
কর্মসূচী
যদি
দেশের
বৃহত্তর
জনগোষ্ঠীর
জন্য
অনুকূল
ও
স্বার্থ
সংশ্লিষ্ট
হয়
তা
হলে
তাকে
সমর্থন
দেওয়া
এবং
সেই
কর্মসূচী
বাস্তবায়নে
জনগণকে
উদ্বুদ্ধ
করাই
এই
ধরনের
সাংবাদিকতার কাজ।
ফিলিপাইনে এক আন্তর্জাতিক সভায় ১৯৬৭ সালে প্রথম ব্যবহৃত হয় “উন্নয়ন সাংবাদিকতা”শব্দটি। ফিলিপাইন ভিত্তিক উন্নয়ন সাংবাদিকতার প্রধান ক্ষেত্র ছিল কৃষি ও ধান উৎপাদন। কিন্তু এখন উন্নয়ন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃতি লাভ করেছে।
No comments