আমল বলতে কি বুঝ আমলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর

আমল বলতে কি বুঝ আমলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর (অনার্স পরিক্ষা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-২০১৯)
What do you mean by Amal? State its importance and necessity.
"আমল" বলতে কি বুঝায় ?
"আমল" শব্দের অর্থ কাজ তবে ইসলামী দৃষ্টিতে সাধারণত আমল বলতে সৎ কাজকেই বুঝায়
ইসলামী পরিভাষায় বনী আদম সৃষ্টির কল্যানে এবং আল্লাহ্ সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আদেশ নিষেধ মান্য করে যে কার্য নিজ জীবনে সম্পাদন করে থাকে তাকেই আমল বুঝায়
ইসলামী শরীয়াতে সাধারণত ধরণের আমলের উল্লেখ পাওয়া যায় যেমনঃ
এবাদত বা প্রার্থনাঃ যেমন- সালাত(নামাজ), রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি
মু'আমালাত বা লেনদেনঃ সততা, বিশ্বস্ততা, ওয়াদা ভংগ না করা, হারাম উপার্জন(সুদ) বর্জন করা, আমানতের খিয়ানত না করা, ওজনে কম না দেয়া, অন্যের হক আত্মসাত না করা, ইত্যাদি গুন সম্বলিত কাজ
মু'আশারাত বা আচার-আচরণঃ ইসলাম নির্দেশিত শিষ্টাচার, সম্প্রীতি কল্যাণমুখী কাজ
সিয়াসাত বা রাষ্ট্রনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্র কোরআন-হাদিসে নির্দেশিত রাষ্ট্রনীতি ধারা পরিচালিত করার কাজ
ইকতিসাদিয়্যাত বা অর্থনীতিঃ আল্লাহ্প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের অর্থ উপার্জন, ব্যয়, ব্যবসা-বাণিজ্য নাগরিক অর্থনৈতিক জীবন কার্যক্রম
দাওয়াত জিহাদ বা আহবান লড়াইঃ জাহিলিয়্যাতি ধ্বংস সাপেক্ষ্যে দীন ইসলাম পরিপূর্ণ কায়েমের লক্ষ্যে কোরআন-হাদিসের আলোকে বনী আদমের প্রতি আহবান এবং প্রয়োজন সাপেক্ষ্যে লড়াই করা
আমলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:- আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার গোলামি দাসত্ব করার জন্য সূরা জারিয়াতের ৫৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষ জীনকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি ইবাদতের অপর নাম নেক আমল মূলত নেক আমলের জন্যই বিশ্ব চরাচর এবং নভোমন্ডল ভূমন্ডল সৃষ্টি করা হয়েছে সৃষ্টি করা হয়েছে সুখের উল্লাসসম জীবন এবং দুঃখের চিহ্নস্বরূপ মৃত্যু সূরা মুলকের - নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি বড়ই মহান শ্রেষ্ঠ যার হাতে রয়েছে সৃষ্টিলোকের রাজত্ব আর তিনি প্রতিটি জিনিসের ওপর শক্তিমান তিনি জীবন মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন যে, তোমাদের মধ্যে নেক আমলের দিক থেকে কে বেশি ভালো তিনি মহা শক্তিশালী ক্ষমাশীল
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নেক আমলের গুরুত্ব তাৎপর্য সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন সূরা ত্বীনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সবচেয়ে সুন্দর আকৃতিতে তারপর বদ আমলের কারণে তাকে পৌঁছে দিই সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবস্থায় তবে তাদের নয়, যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের জন্য তো রয়েছে এমন পুরস্কার, যা কখনও শেষ হবে না’ (সূরা ত্বীন : -) সূরা আসরে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সময়ের শপথ প্রত্যেক মানুষই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে তবে যারা ঈমান আনে, নেক আমল করে, সত্যের পথে দাওয়াত দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয় তারা ক্ষতি থেকে মুক্ত’ (সূরা আসর : -)
নেক আমলের গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একটি হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা নেক আমল বদ আমলের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন নেক আমলের তাৎপর্য এত বেশি যে, কেউ যখন নেক আমলের সংকল্প করে, আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামায় একটি পূর্ণ নেকি লিখে দেন আর যখন সে তা সম্পন্ন করে তখন তার আমলনামায় ১০ থকে ৭০০ নেকি লেখা হয় (বুখারি মুসলিম)
কেয়ামতের দিন বান্দা তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নেক আমল সম্পর্কেও জানতে পারবে একটি ছোট নেক আমলও তাকে বড় ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারবে সূরা জিলজালের - নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কেউ যদি অণুু পরিমাণ নেক আমল করে তবে সেদিন তা দেখতে পাবে আবার কেউ যদি অণু পরিমাণ বদ আমল করে, তবে তাও সে দেখতে পাবেনেক আমলের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নেক আমলকারীরা থাকবে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে আর বদ আমলকারীরা থাকবে প্রজ্বলিত আগুনে’ (ইনফিতর : ১৩-১৪)
দুনিয়া পরকালের জীবনে সুন্দরভাবে বসবাসের জন্য নেক আমলের গুরুত্ব অপরিসীম নিজে নেক আমল করার পাশাপাশি অন্যকেও নেক আমলের নির্দেশ দেয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত প্রকৃত অর্থে এটিও একটি নেক আমল সূরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে নেক কাজের আদেশে এবং বদ কাজের নিষেধের জন্যঅন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সৎকাজের আদেশ করো এবং অসৎকাজের নিষেধ করো তোমার ওপর যে বিপদাপদ আসবে তার জন্য ধৈর্য অবলম্বন করো নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ কাজ’ (সূরা লোকমান : ১৭)
বিশ্ব নবী (সা.) নিজেও ছিলেন নেক কাজের আদেশ দাতা এবং সর্বশেষ্ঠ নেক লোক নবুয়তের আগে হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠা করে তিনি নেক কাজের আদেশ করেছেন আবার নবুয়তের পরও এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন রাসুল (সা.) এর মহান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি নেক কাজের আদেশ করেন এবং বদ কাজের নিষেধ করেন’ (সূরা আরাফ : ১৫৭) বর্তমান পৃথিবীতে নেক কাজের আদেশ এবং বদ কাজের নিষেধÑ আমল আবার জারি করতে হবে তবেই অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসবে

আমলের গুরুত্ব একটি উপমা ইমাম গাজ্জালী (রঃ)


একটি উপমা ইমাম গাজ্জালী (রঃ)

এক বাদশাহ তার কর্মচারীকে খেজুর সংগ্রহ করার জন্য নির্দেশ দিল। বাদশাহর অনেকগুলো বাগান আছে। পরপর বাগানগুলো অবস্হিত। এক বাগানের মধ্য দিয়ে অন্য বাগানে যেতে হয়। কিন্তু নিয়ম হোলো, কোনো বাগানে প্রবেশের পর আগের বাগানে যাওয়া যায় না।
কর্মচারীটি ১ম বাগানে প্রবেশ করল এবং বাগানের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে গেলো। কিছু খেজুর সংগ্রহ করার পর দ্বিতীয় বাগানে গেলো, এবং দেখলো যে আগের বাগানের চেয়ে এই বাগানের খেজুর আরো উত্তম। তাই সে পূর্বের খেজুরগুলো ফেলে দিলো এবং চিন্তা করলে সামনের বাগানের খেজুর হয়ত এর চেয়েও উত্তম হবে। এইভাবে সে বাগানের অন্যান্য সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে গেলো এবং একটার পর একটা বাগান অতিক্রম করতে লাগলো

হঠাৎ একটি বাগানে প্রবেশ করে দেখলো সেখানে কোনো খেজুর নেই। আরো আফসোসের কথা হোলো এরপর কোনো বাগানও নেই। এবং পূর্বের বাগানেও প্রবেশ করা যাবে না। সে আফসোস করতে লাগলো এবং বাদশাহর জন্য কোনো খেজুর সংগ্রহ করতে পারলো না। তার বার বার মনে হতে লাগলো কেনো সে আগেই খেজুর সংগ্রহ করে রাখেনি
প্রতিটি বাগান হোলো একটি দিন। খেজুর হোলো তার আমল। শেষ বাগানটি হোলো তার জীবনের শেষ দিন। এভাবে আশা' আশা' আমাদের দিন গুলো শেষ হয়ে যায়। প্রতি মুহুর্তে আমরা চিন্তা করি আগামীকাল ইবাদত করবে। এমনভাবে আমাদের মৃত্যুর সময় এসে যায়
হজরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) আমলের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য উপরের উপমাটি কোনো এক বইয়ে উল্লেখ করেছেন। আমাদের কাছে আজ আমলের গুরুত্ত্ব কমে গেছে। ক্লাশে ফার্স্ট হবার জন্য আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করি, পরীক্ষার আগের দিন সারা রাত পড়াশোনা করি কিন্তু আমল করবার সময় মনে হয় আগামীকাল করব
রবী ইবনে খাইসাম (রঃ):
রবি ইবনে খাইসাম (রঃ) আপন গৃহে একটি কবর খনন করেছিলেন।  তিনি যখনি অন্তরে কঠোরতা অনুভব করতেন তখন কবরে ঢুকে অনেক্ষন শুয়ে থাকতেন।  এরপর এই আয়াত তেলাওয়াত করতেন
حَتَّى إِذَا جَاء أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ
যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে ) প্রেরণ করুন।   

لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِن وَر
َائِهِم بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ   
যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।      (মুমিনুন ৯৯-১০০)
আয়াতটি কয়েকবার তেলাওয়াত করতেন।  তারপর নিজেকে সম্বোধন করে বলতেন "হে রবি এখন তোমাকে তো ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।  এখন আমল করো।  
হযরত হাতেম আসেম (:):
হযরত হাতেম আসেম (:) বলতেন আমি খেয়াল করে দেখলাম মানুষ বিভিন্ন জিনিস দুনিয়াতে ভালোবাসে এবং সেটা যত্নের সাথে সংরক্ষন করে। কিন্তু মানুষ যেটা ভালোবাসে সেটা কবরে নিয়ে যেতে পারে না , একমাত্র কবরে সে নিয়ে যেতে পারে "উত্তম আমলে" যেটা এই আয়াতে বলা হয়েছে
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُوْلَئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ   
যারা ঈমান আনে সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।   

جَزَاؤُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ
عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ   
তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর।     (সুরাহ আল বাইয়্যিনাত : ,)

No comments

Powered by Blogger.