মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা আলোচনা কর
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা আলোচনা
কর (অনার্স পরিক্ষা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-২০১৯)
Discuss the role of Islam towards the
establishment of human rights.
ভূমিকা:-ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামই প্রথম স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে। মৌলিক অধিকারকেই মানবাধিকার বলে। ইসলামে মানবাধিকার বলতে সেসব অধিকারকে বোঝানো হয়, যেগুলো স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে প্রদান করেছেন। পৃথিবীর কেউ তা রহিত করার অধিকার রাখে না। এ অধিকার কখনো রহিত হওয়ার নয়। ইসলামে মানবাধিকারের ধারণা কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং তা প্রতিটি মুসলমানের বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ অংশও বটে। হজরত রাসুলুল্লাহ [সা.] জীবনব্যাপী সংগ্রাম করে সব মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। বর্তমানের কোন কোন সমাজের মতো মানবাধিকারকে ইসলাম পদদলিত করেনি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে কোনোরূপ প্রতারণার আশ্রয় নেয়নি। আমরা জানি, জীবনের নিরাপত্তা লাভের অধিকার মানুষের সব অধিকারের মূল। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সব মানুষের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করেছে ইসলাম। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো মতামত, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো কারণে কেউ মানুষের এ মৌলিক অধিকার খর্ব করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে কোরানে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, নর হত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাক্তক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতিরেকে কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর গোটা মানবজাতিকে প্রাণে রক্ষা করল। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহর [সা.] বহুসংখ্যক হাদিসও রয়েছে। বিদায় হজের ভাষণে প্রিয়নবি [সা.] বলেন, হে লোক সকল! পরস্পরের জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর ওপর হস্তক্ষেপ তোমাদের জন্য হারাম করা হলো। আইনের দৃষ্টিতে সমতা হলো আইনের শাসন এবং মানুষের অধিকারের বিষয়ে সমান দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ।
ভূমিকা:-ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামই প্রথম স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে। মৌলিক অধিকারকেই মানবাধিকার বলে। ইসলামে মানবাধিকার বলতে সেসব অধিকারকে বোঝানো হয়, যেগুলো স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে প্রদান করেছেন। পৃথিবীর কেউ তা রহিত করার অধিকার রাখে না। এ অধিকার কখনো রহিত হওয়ার নয়। ইসলামে মানবাধিকারের ধারণা কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং তা প্রতিটি মুসলমানের বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ অংশও বটে। হজরত রাসুলুল্লাহ [সা.] জীবনব্যাপী সংগ্রাম করে সব মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। বর্তমানের কোন কোন সমাজের মতো মানবাধিকারকে ইসলাম পদদলিত করেনি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে কোনোরূপ প্রতারণার আশ্রয় নেয়নি। আমরা জানি, জীবনের নিরাপত্তা লাভের অধিকার মানুষের সব অধিকারের মূল। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সব মানুষের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করেছে ইসলাম। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো মতামত, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো কারণে কেউ মানুষের এ মৌলিক অধিকার খর্ব করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে কোরানে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, নর হত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাক্তক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতিরেকে কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর গোটা মানবজাতিকে প্রাণে রক্ষা করল। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহর [সা.] বহুসংখ্যক হাদিসও রয়েছে। বিদায় হজের ভাষণে প্রিয়নবি [সা.] বলেন, হে লোক সকল! পরস্পরের জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর ওপর হস্তক্ষেপ তোমাদের জন্য হারাম করা হলো। আইনের দৃষ্টিতে সমতা হলো আইনের শাসন এবং মানুষের অধিকারের বিষয়ে সমান দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ।
মৌলিক অধিকার সম্পর্কে ইসলাম ইসলাম যেভাবে মৌলিক মানবাধিকারের গ্যারান্টি দিয়েছে অন্য কোন ধর্মে সে ভাবে নেই। মৌলিক মানবাধিকারের ব্যাপারে ইসলামে ব্যাপক বর্ণনা রয়েছে। নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
অন্ন : মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- পৃথিবীতে বিচরণশীল কোন প্রাণী নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ পাক নিয়েছেন। [সূরা-হুদ-০৬]। আরেক স্থানে বলেছেন- আল্লাহ তাআলাই তো রীজিকাদাতা, শক্তির আধার, পরাক্রান্ত। [সূরা-বাকারা-৫৮]।
বস্ত্র : মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে বলা হয়েছে-হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি। যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি, সাজসজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারীর পোশাক। এটি সর্বোত্তম। [সূরা আরাফ-২৬]। হে বনি আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও। [সূরা আরাফ-৩১]।
বাসস্থান : মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম হচ্ছে বাসস্থান। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-তোমরাও তাদেরকে বের করে দাও, যারা তোমাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। [সূরা বাকারা-১৯১] অন্যত্র আল্লাহ বলেন- আর তোমরা ঘরে প্রবেশ করো দরজা দিয়ে। [সূরা- বাকারা-১৮৯]। সূরা নাবাতে বলা হয়েছে-আমি কি তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা করিনি? [নাবা-০৬]
শিক্ষা : শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষাই জাতির উন্নতি, অগ্রগতি, ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন নাজাত নিশ্চিত করে। ইসলাম ধর্মে শিক্ষাকে আরো বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মাহগ্রন্থ আল-কোরআনের প্রথম ঐশীবাণীই শিক্ষা সংক্রান্ত-পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।[আলাক-১-২]। সূরা আর-রাহমানের শুরুতে বলেছেন- করুণাময় আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। [রহমান-১-২]।বিশ্বনবী রাসূল করীম [সা.] বলেন- পৃথিবীতে জ্ঞানী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত আকাশের তারকার ন্যায় যা পানি ও স্থলভাগকে করে আলোকিত। [মুসনাদে আহমদ]। রাসূল [সা.] অন্যত্র ইরশাদ করেছেন-জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরয। এভাবে শিক্ষার প্রতি তাগিদ দিয়ে মৌলিক মানবাধিকারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিষয় জ্ঞান বা শিক্ষার গ্যারান্টি ইসলামে দিয়েছে।
চিকিৎসা : মানুষের রোগ অসুখের মালিক আল্লাহ। আবার এর প্রতিকারেরও ব্যবস্থা আল্লাহপাক করেছেন। আল-কোরআনে বলা হয়েছে- মধু মক্ষিকা থেকে বিভিন্ন রংঙের পানীয় নির্গত হয়, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।[সূরা-নহল-৬৯]। অন্যত্র আল্লাহপাক বলেন- আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। [সূরা-বনি ইসরাইল-৮২] প্রাকৃতিক অনক বস্তু যেমন মধুম যয়তুন, খেজুর, কালজিরা, গম মেহেদী, কুল, সরিষা, আদা, লাউ, পিয়াজ, রসুন, দুধ ইত্যাদিতে রোগের প্রতিষোধক রয়েছে। রাসূল [সা.] বলেন- যয়তুন তৈল খাও এর্ব শরীরে মালিশ করো, কেননা এটা কল্যাণকর বৃক্ষ।-মাযহারী রাসূলের বাণী- যে ব্যক্তি মাসে ৩ দিন সকালে মধু খায় তার কোন বড় ব্যধি হবে না।-ইবনে মাজা
বিবিধ অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামি দিকনির্দেশনা বাঁচার অধিকার : ইসলামের একজন মানুষের জীবন ধবংস বা হত্যা সমগ্র মানব জাতির হত্যার সমতুল্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আল-কোরআনের ঘোষণাঃ যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে সব মানুষকেই হত্যা করে। [মায়েদা -৩২]।জীবনের নিরাপত্তার অধিকার সম্পর্কে বিদায় হজ্জের ভাষণে আল্লাহর রাসূল [সা.] দুপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছেন, সাবধান! আমার পরে তোমরা পরস্পরের হন্তা হয়ে কাফেরদের দলভূক্ত হয়ে যেওনা। মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে তিনি বর্ণনা করেন- কোন মুসলিম ব্যক্তির নিহত হওয়ার তুলনায় সমগ্র পৃথিবীর পতন আল্লাহর কাছে অতি নগণ্য।
ইজ্জত, সম্মান ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার : ইসলাম রাষ্ট্রের প্রত্যেরক নাগরীকের ইজ্জত ও সম্মানের গ্যারান্টি দিয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন- হে মুমিনগণ! না পুরুষ ব্যক্তি অপর পুরুষ ব্যক্তিদের বিদ্রুপ করবে, হতে পারে যে, সে তাদের তুলনায় ভালো হবে। আর না মহিলারা অন্যান্য মহিলাদের ঠাট্টা করবে, হতে পারে যে, সে তাদের তুলনায় উত্তম হবে। নিজেদের মধ্যে একজন অপর জনের ওপর অভিশম্পাত করো না। না একজন অপরজনকে খারাপ উপনামে ডাকবে। ঈমানের পরে ফাসেকী কাজে খ্যাতিলাভ অত্যান্ত খারাপ কথা। [সূরা-আল-হুজরাত, ১১]। বিদায় হজ্জের ভাষণে আল্লাহর রাসূল [সা.] দীপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছেন, হে মানবমন্ডলী! তোমাদের জন্য অপরের জান, মাল ইজ্জত আব্রুর উপর হস্তক্ষেপ হারাম করা হলো।
বিয়ে : আল্লাহ পাক নারী ও পুরুষের মধ্যে যে পারস্পারিক আকর্ষণ সৃষ্টি কর দিয়েছেন, একে অপরের সাথে মিলনের যে কামনা তা মানুষ কিভাবে চরিতার্থ করবে তার সুন্দর সুষ্ঠু ব্যবস্থা রয়েছে ইসলামে বিয়ের মাধ্যমে। বিয়ে ছাড়া নারী-পূরুষের যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা ইসাম সম্পূর্ণ হারাম করেছে।বিয়ে যৌন উচ্ছৃঙ্খলা থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন-তিনিই আল্লাহ! যিনি পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছন। অতঃপর তাদের মধ্যে বংশীয় ও বৈবাহিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে দিয়েছেন। [সূরা-ফুরকান-৫৪]। যে যুগে বিধবাদের দুর্গতির কোন সীমাছিল না, তাদেরকে বিবাহ করা ছিল লাঞ্ছনাকর, গর্হিত কাজ সে যুগে রাসূল [রা.] তাদেরকে বিয়ে করে স্থাপন করলেন এক মনুষ্যত্বের সভ্যতা। দুনিয়া জুড়ে অশান্তি, মানুষের কোন অধিকার নেই। আকাশচুম্বী দালানের পার্শ্বে কারিগরেরা খোলা আকাশের নিচে, খাদ্য উৎপাদনকারী কৃষকরা থাকছে অনাহারে, আজকের ভূখানাঙ্গা বনি আদমের জন্য আল ইসলামের প্রচার প্রসার ও প্রতিষ্ঠা একান্ত প্রয়োজন। তবেই সর্বত্র মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।
মুসলমানদের অধিকার : ইসলাম ধর্মের যারা অনুসারী তারাই মুসলমান। মুসলমানদের অধিকার সম্পর্কে আল-কোরানে বলা হয়েছে- সকল মুমিন পরস্পর ভাই ভাই। [হুজরাত-১০]। অন্যত্র বলা হয়েছে-মুমিনদের প্রতি তোমার বিনয় ও নম্রতার ডানা সম্প্রসারিত করো। [আল কোরআন।]। রাসুল [সা.] বলেছেন- আল্লাহতাআলা এরূপ ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করেন না, যে মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না। নবীজী আরো বলেন- সারা দুনিয়ার মুমিন মুসলমান একই ব্যক্তির ন্যায়, যদি তার চোখে ব্যথা হয়, তার সর্বাঙ্গে উহার ব্যথা অনুভব করে, আবার মাথায় ব্যাথা হলে সমস্ত শরীরে উহা অনুভব করে।
অমুসলিমদের অধিকার : ইসলাম অমুসলিমদেরকে যথাযথ নিরাপত্ত ও অধিকার, শিক্ষার অধিকার, মান সম্মানের অধিকার, পরিবার গঠনের অধিকারসহ সকল প্রকার অধিকার নিশ্চিত করেছে। ধর্মীয় অধিকার সম্পর্কে আল-কোরআনে বলা হয়েছে -তোমরা তাদেরকে মন্দ বল না যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে, তা হলে তারা দৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। [সূরা-আনয়াম-১০৭]। অন্য আয়াতে আল্লাহপাক বলেন- দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। [সূরা বাকারা-২৫] হযরত মুহাম্মদ [সা.] অমুসলিমদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একবার নাজরানের একদল লোক [নাসারা] নবীজির নিকট মেহমান হিসেবে আগমন করে। রাসূল [সা.] মসজিদে-নববীতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন, তাদের নিয়মানুযায়ী সেখানে উপাসনা করারও অনুমতি দিয়েছিলেন।
প্রতিবেশীর অধিকার : আামাদের চার পাশে যাদের বাস তারাই প্রতিবেশী। হাদীসের আলোকে চর্তুদিকে চল্লিশ ঘর করে প্রতিবেশীর অন্তভূক্ত। আল্লাহতাআলা বলেন- ইবাদত করো আল্লাহর তাঁর সাথে অপর কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার করো এবং নিকটাত্মীয় এতিম, মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাসদাসীর প্রতিও। [সূরা নিসা-৩৬]। রাসূল [সা.] বলেছেন- আল্লাহর শপথ, সে মুমিন নয়, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে সে ব্যক্তি? রাসূল [সা.] বলেন, যার অনিষ্ঠ থেকে প্রতিবেশীগণ নিরাপদ নয়। [বোখারি, মুসলিম]
নারীর অধিকার : ইসলামই একমাত্র জীবন বিধান যে ধর্মে নারীর জীবনের অধিকার, কাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতাসহ সকল প্রকার অধিকার নিশ্চিত করেছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, স্ত্রীরা হলো তোমাদের পোশাক, আর তোমরা তাদের পোশাক। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-তাদের অধিকার পুরুষের দায়িত্বে যেভাবে পুরুষের অধিকার তাদের দায়িত্ব।[বাকারা-২২৮]। তৎকালীন জাহেলী যুগে কন্যা-সন্তান জীবন্ত প্রোথিত করা হতো। নবী করীম [সা.] তা রোধ করে নারীদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন। নবী [সা.] বলেন-সন্তানের বেহেশত মায়ের পায়ের নিচে। নারীরা হলো পুরুষদের একান্ত সাথী। [নাসায়ি]।তোমাদের মধ্যে তারা সর্বোৎকৃষ্ট যারা তোমাদের স্ত্রীদের কাছে উৎকৃষ্ট।
শিশুর অধিকার : শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলামের ভূমিকা অন্যতম শৈশবকাল মানব জীবনের মূল ভিত্তি। শিশুরা জাতির ভবিষ্যত। আল-কোরআন ও মহানবী [সা.] শিশুদের অধিকার, শিশুদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান, মেধার বিকাশ, মন-মস্তিষ্ক ও শরীর গঠন, চরিত্র গঠন, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। ইসলাম শিশুর জন্মের পূর্বে থেকে তার অধিকার নির্ধারিত করে দিয়েছে। মহানবী [সা.]-এর দৃষ্টিতে শৈশব হচ্ছে সৌন্দর্য, আনন্দ, স্বপ্ন সৌভাগ্য ও ভালবাসার পরিপূর্ণ এক চমৎকার জগৎ। আল্লাহ পাক নিজেই শৈশবের নাম শপথ করেছেন- শপথ জনকের ও যা জন্ম দেয়।[সূরা বালাদ-০৩]। আরেক স্থানে বলেছেন- সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। [সূরা-কাহাফ-৪৬]। বিশ্বনবী রাসূল [সা.] বলেন- শিশুরা হচ্ছে বেহেশতের পতঙ্গতূল্য। শিশুদের লালন-পালন ও পরিচর্যা একটি ধর্মীয় অধিকার তাদের ভালবাসা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়বিশেষ। রাসূল [সা.] বলেন- পিতার জন্য সন্তানকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম আর কিছুই নেই।
সম্পদের অধিকার : তৎকালীন সময়ে সম্পদের কোন ন্যায্য অধিকার বা নিরাপত্তা বিধান ছিল না। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাস সর্বত্র বিরাজ ছিল। নবীজি সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করবে সে শহিদ হবে। নবীজি আরো বলেন- যদি কোন ব্যক্তি জবরদস্তি করে এক বিঘত জমি দখল করে তা হলে, রোজ কিয়ামতে সাত স্তর জমি তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে।
ন্যায় বিচারের অধিকার : ন্যায়বিচারের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও ইসলাম অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে মুসলিম অমুসলিম সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য ইসলামী আইন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, বল, আমার প্রভু! আমাকে ন্যায় বিচার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা যখন বিচার কর, ন্যায় বিচার করো।তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি।[সূরা-শুআরা-১৫]। ইসলামী আইনে শাসকের গুরুত্ব প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল [সা.] বলেন, সাত শ্রেণীর মানুষ সেদিন আরশে আযীমের নীচে ছায়াপ্রাপ্ত হবে। তন্মধ্যে ন্যায়পরায়ণ শাসক প্রথমেই।
শ্রমিকের অধিকার : যারা পরের প্রতিষ্ঠান বা জমিতে শ্রম দেয় তারাও মানুষ। মালিক শ্রমিককে ঘৃণা করা ইসলামের আদর্শ নয়। বিশ্বনবী রাসূল [সা.] কৈশোরে বকরী চরিয়ে, যৌবনে ব্যবসা-বাণিজ্য করে মেহনতি মানুষের ন্যায় মাটি কেটে মাটির বোঝা মাথায় তুলে, জ্বালনী কাষ্ঠ সংগ্রহ করে নিজের ছেঁড়া কাপড় সেলাই করে এবং শ্রমিকের ব্যাপারে কথা বলে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন-শ্রমিকের ঘাম শুকাবার আগেই তার পাওনা চুকিয়ে দাও। [ইবনে মাজা]। তিনি আরো বলেন-ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হউক, যে ব্যক্তি স্বীয় পরিশ্রম দ্বরা জীবিকা নির্বাহ করে। গরীবের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকিও। তারা তোমাদের কাজ করে থাকে।
উপসংহার তাই ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-ভাষা প্রভৃতি কোনো কারণে কারো প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার মূলমন্ত্র হলো সব মানুষ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। ইসলাম এভাবে মানুষের সম্পত্তির অধিকার, মতামত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার লাভের অধিকার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতাসহ অন্যসব ধর্মের মানুষকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেছে। ইসলামে গোত্র-বর্ণ ইত্যাদি বিদ্বেষের কারণে কোনো ব্যক্তির মৌলিক চাহিদার অধিকার হরণ হয় না। নবি [সা.] সব মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি যে রাষ্ট্র ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন, সে রাষ্ট্রের কার্যক্রম চলত পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে। আর তাতে ছিল সবার অংশগ্রহণ।
No comments