খিলাফত বলতে কি বুঝ? ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার মূলনীতি সমূহ আলোচনা কর। (অনার্স পরিক্ষা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-২০১৯)


What do you mean by Khilafat? Discuss the Principal of the Islamic Khilafat.
ভূমিকা-
আল্লাহ সুবাহানাওতালা বলেন,
আমি মানুষকে খলীফা হিসেবে সৃষ্টি করেছি।  [বাকারাঃ৩০]

খিলাফত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠা যা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল
আভিধানিক অর্থ
খিলাফত খুলুফুন শব্দ হতে এসেছে। যার অর্থ হল প্রতিনিধিত্ব করা,অনুসরকারী, অনুসরনীয় ব্যক্তি,স্থলাভিষিক্ত হওয়া, পশ্চাদানগামী,কারও মৃত্যুর পর তার স্থানে উপবেশন ইত্যাদি।খলীফার পাশাপাশি এসকল কথা আসবে তা হল সুলতান,আমীড় এবং ইমাম। এখন এখানে নেতা হিসবে কেউ কেউ ইমামত, আমীরত এবং সালতানাত হিসেবে।এই শব্দগুলোর ভিতর পার্থক্য করা হয়েছে।কেউ কেউ বলেছেন যে, মুহাম্মদ(সাঃ) এরপর যারা প্রথম ত্রিশ বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা খলীফা।বাকি সকলে সুলতান কিংবা আমীর।আবার কেউ কেউ বলেছেন এমন কথা যে যিনি যারা কুরআন-সুন্নাহের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন তারাই হল খলীফা আর যারা তা করে নাই তারা সুলতান বা আমীর।আবার কেউ কেউ খলীফাকে রাষ্ট্রনায়ক বলে মনে করে আর ইমামকে ধর্মীয় নেতৃত্বদানকারী ব্যাক্তি হিসেবে অবহিত করেছেন।
 “A Modern Arabic Dictionary” এ খিলাফতের অর্থ হিসেবে বলা হয়েছে, vicarship, deputiship, successionship, etc. যার উপর এই মহান দায়িত্ব অর্পিত হবে তিনি হলেন খলীফা।খলীফা কথাটি কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।আল্লাহ বলেন, “তোমরা স্মরণ কর, যখন তোমাদেরকে আদ জাতির পরে সর্দার করেছেন; তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। [আরাফঃ৭৪]
পারিভাষিক সংজ্ঞা
খিলাফত হল একটি ধর্মীয়,সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।ইসলামী সরকার পদ্বতির নাম হল খিলাফত।
খিলাফতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইবন খালদুন বলেছেন, “আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলাম সংরক্ষণ,তা অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার নাম হল খিলাফত।
ইমাম গাযযালী বলেন, “খিলাফত এমন একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে নয় বরং আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ও রাসূল(সাঃ) এর প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হয়।
রশীদ রিদ্দা বলেন, “ইসলামী সরকার ও রাষ্ট্র এমন এক ধর্মতন্ত্র যা ধর্মীয় ও পার্থিব বিষয়াবলী রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করে।
মাজিদ খাদ্দুরী বলেন, “The khilafot means temporal leadership based on religion.”
আমরা সার্বিকভাবে বলতে পারি যে, কুরআন-সুন্নাহের আলোকে যে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাকেই খিলাফত বলা হয়।
খিলাফতের প্রকারভেদ
মাওলানা কারী মুহাম্মদ তাইয়েব বলেন, খিলাফত দুই ধরনের হয়।তা হল খিলাফাতুল্লাহ এবং খিলাফাতুল্লাহ আম্বিয়া।
১. খিলাফাতুল্লাহঃ এর অর্থ হল আল্লাহর খলীফা অর্থাৎ, যারা নবী-রাসূল তারা। এই প্রকারে খিলাফতের ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে, “আমি মানুষকে খলীফা হিসেবে সৃষ্টি করেছি।  [বাকারাঃ৩০]
আবার কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “হে দাউদ আমি তোমাকে খলীফা করলাম। [সাদঃ২৬]
২. খিলাফাতুল্লাহ আম্বিয়াঃ এই প্রকারের খিলাফতের কথা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।যারা নবী-রাসূলগণের দায়িত্ব নবূয়াতপ্রাপ্তি ছাড়া পালন করেছেন তারাই এর অন্তর্ভূক্ত হবেন।খুলাফায়ে রাশেদীনের খলীফাগণ এদের অন্তর্ভূক্ত হবেন।এ ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়,
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূল (সাঃ) বলেন,                  
বনী ইসরাইলে আম্বিয়া কিরাম নেতৃত্ব দিতেন।যখনই কোন নবী ইন্তিকাল করতেন তখনই পরবর্তীতে নবী তার স্থলভিষিক্ত হতেন।কিন্তু আমার পর আর কোন নবী আসবে না।তবে আমার পর খলীফা হবে। (বুখারী)
ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার মূলনীতি
১. সার্বভৌমত্বঃ সার্বিকভাবে আল্লাহ পাকের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা হল ইসলামী খিলাফতের মূলনীতি।কারণ এই পৃথিবীর সকল কিছুর সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর।তার উপর কোন সার্বভৌমত্ব নেই।এ বিশ্বাস রেখে ইসলামী খিলাফত পরিচালিত হতে হবে।আল্লাহ এ ব্যাপারে কুরআনে বলেন,
আল্লাহ্ ছাড়া কারো নির্দেশ চলে না। [আনআমঃ৫৭]
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। [হাদীদঃ২৫]
২. শুরাভিত্তিক শাসনব্যবস্থাঃ এই ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দেয় না।তা মানুষের সাথে মানুষের পরস্পর পরামর্শের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ব করে থাকে।তাই আল্লাহ বলেন,
কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। [ইমরানঃ১৫৯]
পারসপরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে[শুরাঃ৩৮]
মুহাম্মদ(সাঃ) বলেছেন, “তোমরা কোনকিছু কুরআন-হাদীসে না পেলে পরামর্শ করে মীমাংসা দিবে।
উমার (রাঃ) পরামর্শের উপর জোড় দিয়ে বলেছেন, “যে রাষ্ট্রে মুসলমানদের পরামর্শ নেই তা খিলাফত নয়।
৩. সুবিচার নিশ্চিত করাঃ ইসলামী রাজনীতির অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য হল সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। এ ব্যাপারে কুরআনে এসেছে,
হে ঈমানদারগণ! ইনসাফের পতাকাবাহী ও আল্লাহর সাক্ষী হয়ে যাও, তোমাদের ইনসাফ ও সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের ব্যক্তিসত্তার অথবা তোমাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে গেলেও। [নিসাঃ১৩৫]
সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। [মায়িদাঃ৮]
আমি তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি। [শুরাঃ১৫]
মাখজুমি বংশের মেয়ে ফাতিমা। সম্মান আর আভিজাত্যে আরব জোড়া সুনাম। আছে অর্থসম্পদ প্রাচুর্য। তবুও চুরির দায়ে ধরা পড়লেন ফাতিমা। কুরায়শদের মাঝে কানাকানি, ফিসফিসানি। কিছু একটা করা দরকার। বিব্রত কুরায়শগণ অবশেষে রাসূলের (সাঃ) কাছে শাস্তি কমানোর সুপারিশের কথা ভাবেন।অতঃপর তিনি উঠে দাড়ালেন, জনতাকে সম্বোধন করে দৃঢ কন্ঠে ঘোষণা করলেন, “তোমাদের পূ্র্ববর্তী লোক শুধু এ জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে যে, তাদের মধ্যে কোন ভদ্র বা অভিজাত বংশীয় লোক চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। কিন্তু যদি কোন দূর্বল ব্যক্তি চুরি করত তবে তার উপর অনুশাসন কার্যকর করত। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদ তনয়া ফাতিমাও যদি চুর করে তবে তার হাতও কর্তিত হবে
 ৪. সমাজে ভাতৃত্ব ও সাম্য প্রতিষ্ঠাঃ ইসলাম একটি রাষ্ট্রে ভিতর কেবল মাত্র শাসক-শাসিত শ্রেণীর দুরুত্ব কমায় না বরং তা লাঘব করে সমাজে ধনী-গরীব,উচু-নীচু,বড়-ছোট,কালো-সাদা সকল ধরনের ভেদাভেদ দূর করে।সমাজে সৃষ্টি করে মানুষের সাথে মানুষের ভাতৃত্ব যার ইঙ্গিত আমরা লক্ষ্য করি যখন সকল মুসলিমগণ জামায়াতের সাথে একত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রে আদায় করে তখন তাদের ভিতর থেকে সকল ধরনের ভেদাভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।আল্লাহ পাক কুরআনে ইরশাদ করেন,
মুমিনরা তো পরসপর ভাই-ভাই। [হুজুরাতঃ১০]
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরসপরে পরিচিতি হও। [হুজুরাতঃ১৩]
 ৫.  কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক শাসনব্যবস্থাঃ এই ইসলামী শাসনব্যবস্থায় কুরআন-হাদীসভিত্তিক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়।এরইর আলোকে
 আল্লাহ বলেন,
তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। [নূরঃ৫৫]
রাসূল(সাঃ) বলেছেন,    
আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি,তোমরা যতদিন তা আঁকড়ে ধরবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না।আর তা হল আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি হল তার রাসূলের সুন্নাহ।
এর আলোকে আমরা বলতে পারি যে, মুসলিমগণ যদি কুরআন-সুন্নাহের আলোকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলে তাহলে একটি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ সফল হবে।আর এই কুরআন-হাদীস হল ইসলামী শাসনতন্ত্রের মূল সংবিধান।
৬. নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণঃ ইসলামী রাষ্ট্রব্যস্থায় সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা খলীফার জন্য একটি অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।খিলাফত ব্যবস্থায় বসবাসরত সকল নাগরিকের ধর্মীয়,রাজনৈতিক,সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষা করা খলীফার জন্য একটি অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।যেমন আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “তোমরা কোন কারণ ছাড়া একে অন্যকে হত্যা কর না।[বনী-ঈসরাইলঃ৩৫]
তোমরা একে অন্যের সম্পদকে অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না। [নিসাঃ২৯]
ধর্মের ব্যাপারে নেই কোন বাড়াবাড়ি। [বাকারাঃ২৬০]
৭. যিম্মীদের অধিকার নিশ্চিতকরণঃ ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিম নাগরিকদের যিম্মী বলা হয়।তারা যেহেতু খিলাফত যিযিয়া কর প্রদান করে তাই তারাও ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক।তাদের উপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপানো যাবে না।আইনের চোখে তাদের সমান হিসেবে দেখা,তাদের জীবন,সম্পদ,সম্ভ্রম রক্ষা করা খিলাফত ব্যবস্থায় রক্ষা করা অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।তাদের এইখানে চাকুরী করার যোগ্যাতা আছে।তাদেরকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন কিংবা হত্যা করার কোন অবকাশ নেই।রাসুঊল(সাঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি কোন যিম্মীকে হত্যা করে সে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না।
সাবধান! কেউ যদি কোন যিম্মীর প্রতি যুলুম করে অথবা তাকে তার অধিকার থেকে কম দেয় কিংবা বহির্ভূত কোন কাজ তার উপর চাপিয়ে দেয় কিয়ামতের দিন আমি ঐ যিম্মীর পক্ষ নিব। [বুখারী]
৮. ঐক্যবদ্ব জাতি ও বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাঃ খিলাফত ব্যবস্থা এই পৃথিবীতে এমনভাবে গড়ে উঠবে যাতে করে পুরো বিশ্ব ধীরে ধীরে খিলাফতের অন্তর্গত হয় এবং তা ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।একজন খলীফার অধীনে সমগ্র বিশ্ব পরিচালিত হবে।   উপরের আলোচনায় এই বিষয়টি অনেকের কাছে মনে হচ্ছে একই সময় দুইজন খলীফা হতে পারে না। তা নিতান্ত অন্যায়।এ ব্যাপারে সকল মুসলিম চিন্তাবিদগণ একমত পোষণ করেছেন যে একাধিক খলীফা থাকতে পারে না।খলীফা একজন হবে।তারই অধীনে সমগ্র মুস্লিম জাতির ভিতর এক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হবে।আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা সকলে আল্লাহর রিযীককে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরসপর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। [ইমরানঃ১০৩] একাধিক খিফতের দ্বারা এই বিশ্বঐক্য ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তাই এ ব্যাপারে
হাদীসে এ আছে যে, কেউ যদি খিলাফতের দাবি করে আর এ অবস্থায় যদি শরীয়াত মোতাবেক কোন খলীফা থাকেন সেক্ষেত্রে তাকে তিন দিন সময় দেওয়া যেতে পারে।যদি সে না পরিবর্তিত হয় তাহলে তাকে হত্যা কর।কারণ এর দ্বারা ফাসাদ সৃষ্টি হবে এবং ফ্যাসাদে প্রচুর লোক নিহত হবে।
৯. স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতীমুক্ত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাঃ
১০. দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করাঃ দ্বীন ইসলাম যেন রাষ্ট্রে সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য খিলাফতের সদা তৎপর থাকতে হবে।আল্লাহ বলেন,
আপনি একনিষ্ঠভাবে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করুন।
তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ্য দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে।  [হাজ্জঃ৪১]
খলীফার যোগ্যতা ও গুণাবলীঃ এছাড়া সাধারণভাবে একজন খলীফার যেসকল বিশেষ শর্ত থাকা দরকার তা হল
১.মুসলিম হওয়াঃ মুসলিম মিল্লাতকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এটি হল প্রথম ও প্রধান শর্ত।কারণ কাফিরগণ কখনও মুসলিমদের উপর নেতৃত্ব দিতে পারে না।আল্লাহ পাক এ ব্যাপারে বলেন,
                    “আল্লাহ্ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না। [নিসাঃ১৪১]
  ২.পুরুষ হওয়াঃ মহিলাদের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার কোন ইখতিয়ার ইসলামে নেই।কারণ আল্লহ পাক সৃষ্টিগতভাবে পুরুষদের নারীদের উপর  ক্ষমতা প্রদান করেছেন।আল্লাহ পাক বলেন,
 “পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল [নিসাঃ৩৪]
তাছড়া রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে জাতির নেতৃত্ব কোন মহিলাকে দিবে তারা কখনও সফল্কাম হবে না।
৩.বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াঃ যারা নাবালিগ ও প্রাপ্তবয়স্ক তারা নেতৃত্বদানের ব্যাপারে একেবার অযোগ্য।তারা সুষ্ঠুরুপে উম্মাতকে পরিচালনা করতে পারবে না।আর তাছাড়া তাদের আমলের কোন হিসাব নেওয়া হয় না।এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেন,
তিন ধরনের লোকের কাজ কখনও লিপিবদ্ব করা হয় না।তারা হলঃ
১.প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত                     ২.ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ জাগ্রত না থাকে          ৩.পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ না জ্ঞান থাকে ”
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ)এর মতে, ১৫ বছর হতে একজন পুরুষ মানুষ বালিগ হয়।কারণ আব্দুল্লাহ বিন উমর(রাঃ)যখন বদরের যুদ্বে অংশগ্রহণ করতে চাইলেন তখন রাসূল(সাঃ)তাকে যুদ্বে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।কারণ তিনি সে সময় নাবালগ ছিলেন তার বয়শ ছিল ১৪।এরপরের বছর তার বয়স যখন ১৫ হয় তখন রাসূল(সাঃ) তাকে উহুদের যুদ্বে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করেন।
   ৪.বুদ্বিমান ও বিবেকসম্পন্ন হওয়াঃ এটা ইমামতের অন্যতম প্রধান শর্ত।কারণ পাগল ব্যক্তি নেতৃত্বদানে সম্পূর্ণরুপে অক্ষম।আল্লাহ বলেন,
আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন-যাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না। [নিসাঃ৪]
 ৫.স্বাধীন হওয়াঃ কোন ক্রীতদাস মুসলিম মিল্লাতের নেতৃত্ব কখনও দিতে পারে না।কারণ ইসলাম কেবলমাত্র এক আল্লাহ পাকের দাসত্ব করার নির্দেশ প্রদান করে।কুরআনে বলা হয়েছে,
                          “আমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহ্কে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা             পালনকর্তা  বানাব না। [ইমরানঃ৬৪]
 ৬.শরীয়াতের হুকুম কার্যকর করাঃ ইমামতের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল ইসলামকে সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা।তাই তার ভিতর এরকম যোগ্যতা থাকতে হবে যার দ্বারা সে শরীয়াতের হুকুমকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
  ৭.বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ হওয়াঃ সমগ্র মুসলিম মিল্লাতকে পরিচালনা করার জন্য ইমামকে অত্যন্ত বিচক্ষণ হতে হবে।কারণ রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ছাড়া কখনও সঠিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে না।
  ৮.ইসলামী জ্ঞান থাকাঃ যে ব্যক্তি ইমামত লাভ করবে তার ইসলামী বিষয়সহ অন্যান্য যাবতীয় বিষয়ের উপর পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে।তানাহলে সে কখনও সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের নেতৃত্বে প্রদানে ইসলামকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে না।তাই আবূ রাগিব ইসপাহানী(রঃ)বলেন, “তোমরা ফিকহ সম্পর্কে বুৎপত্তি জ্ঞান অর্জন এবং আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকফিহাল না হয়ে নেতৃত্ব দিতে যেও না।
 ৯.নৈতিক চরিত্রে অধিকারীঃ ইসলাম নীতি-নৈতিকতার উপর সর্বদা গুরুত্বারোপ করে থাকে।যে ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাতের শাসন কার্যক্রম পরিচালনা করবে তার অন্তরকে পবিত্র হতে হবে।আবূ রাগিব ইসপাহানী(রঃ) এ ব্যাপারে বলেন,
যার মধ্যে চারিত্রিক পরিশুদ্বি নেই সে খলীফা হওয়ার যোগ্য নয়।কেননা যার চারিত্রিক পরিশুদ্বি নেই তার কথা ও কাজও পরিষ্কার হবে না।
১০.পদলোভহীন হওয়াঃ ইমামকে পদলোভহীন হতে হবে।কারণ পদলোভী ব্যক্তিবর্গ সর্বদা নিজ স্বার্থকে বড় করে দেখে।তাই রাসূল(সাঃ) বলেন,
দায়িত্ব আমি তাকে দেই না,যে দায়িত্ব চেয়ে নেয়। [তিরমিযি]
তবে তারজন্য একেবারে নিষ্পাপ হওয়া জরুরী কোন বিষয় নয়।এবং তার জন্য সমসাময়িকদের ভিতর শ্রেষ্ঠ হওয়া জরুরী কোন বিষয় নয়।                      
খলীফার দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ সকল খলীফাকে এমনভাবে সবকিছুই খেয়াল রাখতে হবে।জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো রক্ষা করা হবে তাদের প্রধান কাজ।তারা সেই সাথে মানুষের ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করে।তাদের দেশের আভ্যন্তরীন শৃংখলা রক্ষা করে চলবে।তারা বহিঃশত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করবে।ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহাড়া দেওয়া।তার আরেকটি প্রধান কর্তব্য হল রাষ্ট্র জনগণের মানবাধিকার রক্ষা করা এবং রাষ্ট্রে সুবিচার নিশ্চিত করা।কারণ সুবিচার ছাড়া একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না।জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।আর তার অধিকার হবে এই যে সে জনগণ তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে।জনগণ তার নির্দেশ মোতাবেক যাকাত,উশর আদায় করবে।যিম্মী হলে যিযিয়া আদায় করবে। জিহাদের ডাক দিলে তাকে জিহাদের সাড়া দিতে হবে।বিশেষ অবস্থায় জনগণের উপর করারোপ করবে।(খিলাফতের প্রকৃতির কথা এখানে বেশী আসবে)
খিলাফতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
খিলাফতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।যেহেউ এই পৃথিবীতে আর কোন নবী কিংবা রাসূল আসবেন না তাই এখন এই মিসলিম উম্মাহকে সঙ্ঘব্দ্বভাবে একত্রিত হয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার জন্য তৎপর থাকতে হবে।
১. মুমিনের পরীক্ষাস্বরুপঃ আল্লাহ পাক মুমিন বান্দাদের এ জন্য প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন যার দ্বারা সে আল্লাহর হুকুম তথা পরীক্ষায় যথাযথভাবে পালন করতে পারে।তাই তিনি বলেন,
অতঃপর আমি তোমাদেরকে যমীনে তাদের পর প্রতিনিধি বানিয়েছি যাতে দেখতে পারি তোমরা কি কর। [ইউনুসঃ১৪]
২.দ্বীন ইসলামকে দুদৃঢ়করণঃ যদি এই পৃথিবীতে খিলাফত প্রতিষ্ঠা লাভ করে তাহল এর দ্বারা পৃথিবীতে দ্বীন ইসলাম আরও সুদৃঢ় হবে এবং পৃথিবীব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।আল্লাহ বলেন,
তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। [নূরঃ৫৫]
৩. সত্য দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করাঃ বর্তমান এই পৃথিবীতে দ্বীন ইসলামকে ধরে রাখার একমাত্র পন্থা হল খিলাফত ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা।অন্যথায় তা সম্ভব নয়।কারণ পূর্বে তা রক্ষা করা হত নবূয়াতের দ্বারা আর এখন তা হবে খিলাফতের দ্বারা।রাসূল(সাঃ)বলেন,
বনী ইসরাইলে আম্বিয়া কিরাম নেতৃত্ব দিতেন।যখনই কোন নবী ইন্তিকাল করতেন তখনই পরবর্তীতে নবী তার স্থলভিষিক্ত হতেন।কিন্তু আমার পর আর কোন নবী আসবে না।তবে আমার পর খলীফা হবে। (বুখারী)
৪. সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানঃ খিলাফত ইসলামী সমাজের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান।এটি ছাড়া কখনও হিদায়াত লাভ করা সম্ভব নয়।তাই রাসূল(সাঃ) বলেন, “আমার পর হিদায়তপ্রাপ্ত খলীফাদের মেনে চলবে।
৫. মানুষের দায়িত্ব পালনঃ আল্লাহ পাক মানুষকে এই পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন।আল্লাহ বলেন,
আমি মানুষকে খলীফা হিসেবে সৃষ্টি করেছি।  [বাকারাঃ৩০]
আর মানুষের দায়িত্ব হল তার এই কাজকে যথযথভাবে বাস্তবায়ন করা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে
৬. ক্ষমতার অপব্যবহার রোধঃ এই পৃথিবীতে খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরে শাসকবর্গের সকল ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে।ইমাম তাইমিয়া বলেন,
খিলাফতের মাধ্যমে ক্ষমতার ব্যবহার অত্যন্ত আদর্শ কাজ।এর সহজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
৭.ইসলামী আইন বাস্তবায়নঃ খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে ইসলামী আইন সহজে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা যায়।অন্যথায় তা অসম্ভব।ইমাম গাযযালী(রঃ) বলেন,
স্বর্গীয় আইন বাস্তবায়নে খিলাফতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৮. বৈষম্য দূরীকরণঃ খিলাফত প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সমাজে সকল ধরনের ভেদাভেদ, বৈষম্য, দূরীভূত হবে।সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি।যা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তারই অনুসারীগণ এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক গিবন বলেছেন, “সেসময় খলীফাদের সাধারণ জীবন-মান সকল শাসকদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর।
৯. সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠাঃ এই জায়গাটি দখল করার ব্যাপারে সাহস পায় নাই।কারণ দেখল যে এই জাতিটাকে শাসন করা একটি কঠিন কাজ।কিন্তু তাদের ভিতর থেকে রাসূল(সাঃ)এর আবির্ভাব হল।এই জাতির ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে, “এদের কাছে ইতিপূর্বে কোন নবী আসেন নাই।তিনি তাদের মাঝে যেয়ে এই খারাপ লোকগুলোকে সোনার মানুষে পরিণত করলেন এবং তিনি সেখানে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করলেন।মানুষ মানুষে পরিণত হল।তারা আল্লাহর দাসে পরিণত হল।এই মদীনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে এক বিশাল খিলাফত ব্যবস্থা পরিণত হল।এর বিস্তৃতি ঘটতে থাকল।উমাইয়া,আব্বাসীয়,উসমানীয় যুগে এর ব্যপক বিস্তৃতি ঘটতে থাকে।
উপসংহার
খিলাফতের গুরুত্ব অপরিসীম।সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরত্ব পূর্ন ও কার্যকরী পন্থা। 

No comments

Powered by Blogger.