ঈমান ও ইসলামের পারস্পারিক সম্পর্ক বর্ণনা কর (অনার্স পরিক্ষা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-২০১৯)

إيمَان (ঈমান) এর শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস, স্বীকার, আস্থা, মান্য, কৃতজ্ঞ। إيمَان (ঈমান) শব্দটি আমন শব্দ থেকে উৎপন্ন। আমন শব্দের অর্থ্ নিশ্চিত হওয়া নিরাপদ হওয়া প্রভৃতি। আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার রহ: বলেন- ঈমানের শাব্দিক অর্থ হল বিশ্বাস করা।(ফতহুল বারী :, পৃ:৬০)
>>> ইসলাম কি?<<<শাব্দিক অর্থে إسْلامٌ (ইসলাম) শব্দের অর্থ্ হলো বশ্যতা, সমর্পণ, আত্মসমর্পণ, অনুগত, ইসলাম গ্রহণ। ইসলামী পারিভাষায় إسْلامٌ (ইসলাম) হলো তাওহীদ (একত্ব) আনুগত্যের সাথে এক আল্লাহর নিকট পূর্ণ্ আত্মসমর্পণ করা এবং শিরক তার অনুসারীদের থেকে সর্ম্পকচ্ছেদ ঘোষণা করা। এবাদতের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করতে হবে এবং শিরক মুশরেকদের সঙ্গে সম্পর্ক ছ্ন্নি করতে হবে। আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌহে মুমিনগন, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আল-বাকারা, /২০৮
সুতরাং যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করবে সে মুসলিম, আর যে ব্যক্তি আল্লাহ অন্যের জন্য আত্মসমর্পণ করবে সে মুশরিক, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য আত্মসমর্পণ করবে না সে অহংকারী কাফের
>>> ঈমান ইসলামের সম্পর্ক <<<যদি ইসলাম ঈমান দুটি শব্দ একত্রে উল্লেখ করা হয় তবে ইসলাম শব্দের উদ্দেশ্য হলো: বাহ্যিক কার্যাদি তা হলো পাঁচটি রোকন আর ঈমান শব্দের উদ্দেশ্য গোপনীয় কার্যাদি তা হলো ছয়টি রোকন। আর যখন ভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হবে তখন একটি অপরটির অর্থে বিধানে শামিল হবে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলাম হলো বাহ্যিক আর ঈমান হলো অন্তরের বিষয়। (ইমাম আহমেদ থেকে বর্নিত)
ঈমান আমল, দুয়ের সমন্বয়ই হচ্ছে ইসলাম। ইমান হল অন্তরের আমলের নাম। আর ইসলাম হল বাহ্যিক আমলের নাম। যে ঈমান বা বিশ্বাস করে সে মুমিন। যে বাহ্যিক আমলগুলি করে সে মুসলিম। আমাদের উভয় আমল করতে হবে। মানুষ বাহ্যিক আমলগুলি করে যেমন সালাত, সিয়াম ইত্যাদি তার মানে সে মুসলিম। কিন্তু সে ইমানের বিষয়গুলি জানে না বা ভুল জানে বা মানে না অর্থাৎ সে মুমিন নয়। তাই আজকাল বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম কিন্তু মুমিন নয়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী আর আমাদের যবেহ করা প্রানী খায়, সে- মুসলিম। সহীহুল বুখারী : হাদিস : ৩৯১
উপরের হাদিস থেকে বুঝা যায় কেউ বাহ্যিক আমলগুলি করলেই সে মুসলিম। আর যে সালাত আদায় করে তাকে আমাদের মুসলিম বলতে হবে। হয়ত সে হতে পারে মুনাফেক মুসলিম। আর আমরা কারো অন্তরের খবর জানি না তাই আমরা কাউকে মুনাফেক বলব না
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার যবান (কথা) হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। (বুখারী মুসলিম)
উপরের হাদিসে জবান হাতের কথা বলা হয়েছে। আর জবান হাতের কাজ হলো বাহ্যিক আমল করা। এই হাদিস থেকেও প্রমান হয় যে বাহ্যিক আমলগুলি করে সে মুসলিম
কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে মুসলিম হয় মাত্র কিন্ত পরিপূর্ণ্ মুমিন হতে পারে না। আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
قُلْ لَمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِنْ قُولُوا أَسْلَمْنَا
আপনি বলুন, ‘তোমরা ঈমান আননি’, বরং তোমরা বল, ‘আমরা ইসলাম গ্রহন করলাম হুজরাত, ৪৯/১৪
এই আয়াতে বুঝা যায় ইসলাম গ্রহণ করলাম মানে মুসলিম হলাম মাত্র এখনও পরিপূর্ণ্ মুমিন হতে পারেনি
ঈমান ইসলামের চাইতে ব্যাপক কারণ ঈমান ইসলামের শামিল করে। যার ফলে কোন বান্দা ঈমানের স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না যতক্ষন তার মধ্যে ইসলাম দৃঢ়মূল না হয়। আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُلْ لا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلامَكُمْ بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلإيمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَএই লোকেরা মনে করে, তারা ইসলাম গ্রহন করে আপনাকে উপর অনুগ্রহ করেছে, আপনি বলুন, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করনি বরং আল্লাহ তোমাদেরকে ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। হুজরাত, ৪৯/১৭
এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, ইসলামের চেয়ে ইমানের, মুসলিমের চেয়ে মুমিনের গুরুত্ব মর্যাদা বেশি
আর ঈমান শব্দটি বিশেষ অর্থে মুমিন তথা ঈমানদারগণ। কেননা ঈমানদারগণ মুসলিমদের মধ্য হতে একটি ছোট দল, সবাই মুমিন নয়। সুতরাং প্রত্যেক মুমিন হল মুসলিম কিন্তু প্রত্যেক মুসলিম মুমিন নয়। আল্লাহ বলেছেন-
الَّذِينَ آمَنُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا مُسْلِمِينَযারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাসী ছিল (অর্থাৎ মুমিন ছিল) আর তারা ছিল মুসলিম। আয-যুখরুফ, ৪৩/৬৯
অর্থাৎ মুমিনরা হল প্রকৃত মুসলিম। আমাদেরকে প্রকৃত মুমিন, মুসলিম হতে হবে। ইসলাম গ্রহনের পর বা মুসলিম হওয়ার পরও মানুষ কুফরী করতে পারে। আল্লাহ বলেন-
وَكَفَرُوا بَعْدَ إِسْلامِهِمْ
আর তাদের ইসলাম গ্রহনের পরও তারা কুফরি করছে। তাওবা, /৭৪
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَمْ يَكُنِ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيلا
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে তারপর কুফরী করেছে, আবার ঈমান এনেছে তারপর কুফরী করেছে এরপর কুফরীকে বাড়িয়ে দিয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে
সঠিক পথের হেদায়ত দিবেন না। আন-নিসা, /১৩৭
উপরের আয়াত দুটি থেকে প্রমাণ হয় মুসলিম হওয়ার পরও মানুষ কুফরী বা মুনাফেকী করতে পারে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلاةِ قَامُوا كُسَالَى يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلا يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلا قَلِيلاনিশ্চয়ই মুনাফেকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে আর তিনি (আল্লাহ) তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছেন আর তারা যখন সালাতের জন্য দাঁড়ায়, তখন শৈথিল্যভাবে দাঁড়ায়, লোক দেখানোর জন্য, আর তারা আল্লাহকে সামান্যই স্মরণ করে। আন-নিসা, /১৪২
مُذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَلِكَ لا إِلَى هَؤُلاءِ وَلا إِلَى هَؤُلاءِ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ سَبِيلاতারা মধ্যখানে দোদুল্যমান, না এদের দিকে, আর না ওদের দিকে; আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনো তার জন্য কোন পথ পাবে না। আন-নিসা, /১৪৩
উপরের আয়াতগুলো প্রমাণ করে মুসলিম হবার পরও মানুষ মুনাফেক বা কাফের হতে পারে
আল্লাহ যেন আমাদের মুনাফেকী কুফরী থেকে রক্ষা করেন। আমাদের যেন প্রকৃত মুমিন, মুসলিম হিসাবে কবুল করেন। আমিন

No comments

Powered by Blogger.